নাউ স্টাডি বাংলা ব্লগে আপনাকে স্বাগতম

{ কিভাবে গ্রাফিক ডিজাইন শিখে সফল হবেন জেনে নিন }




⧪ একটি সুন্দর শিল্পকর্ম কিছু চমৎকার চিন্তা ও অনেকদিনের সাধনার      বহিঃপ্রকাশ, যা নির্ভর করে অনেকটাই আপনি সেই শিল্পের কতটুকু বেসিক    বা মূল বিষয় বুঝতে পারছেন তার উপর। আপনি বছরের পর বছর  ডিজাইনের অলি গলি শিখতে গিয়ে কাটিয়ে দিতে পারেন, কিন্তু কিছু মূল  নিয়মকানুন জানা থাকলে ও তার উপর আপনি নিরলস প্র্যাকটিস চালিয়ে  গেলে প্রফেশনাল হতে বেশি সময় লাগে না।   
⧭আপনি যদি একজন সফল গ্রাফিক ডিজাইনার হতে চান তবে সর্ব প্রথম আপনার যা দরকার তা হল অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও  অধ্যবসায়। আপনি একদিন ভাবলেন আপনি গ্রাফিক ডিজাইনে ক্যারিয়ার করবেন, ভর্তিও হয়ে গেলেন নামি দামি একটা  ট্রেনিং সেন্টারে, ক্লাস শুরু করলেন এবং কিছুদিন ক্লাস করার পর আপনার আগ্রহ আর আগের মত নেই, আপনি দেখলেন  যে পরিমান সময় ও ধৈর্য একটা সাধারন ডিজাইন তৈরিতে লাগছে তা আপনার জন্য সময় সাপেক্ষ বা সময়ের অপচয় মনে  হচ্ছে। আবার এমনও হয়, আপনি গ্রাফিক ডিজাইনের কোর্স শেষ করার পর আর এই পেশাতেই থাকার চিন্তা করছেন না।  এগুলো কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এখন কথা হল কেন এমন হয়! এর একটাই কারন আপনি লক্ষ্য স্থির করার  আগে সঠিকভাবে রিসার্চ করেননি।
তাহলে কিভাবে রিসার্চ করা যায়? এত কঠিন ভাবে না ভেবে আমরা সহজভাবে দেখি। প্রাথমিক পর্যায়ে আপনি কিছু প্রশ্ন নিজেই নিজেকে করতে পারেন। যেমন –
  • ডিজাইনে অথবা আর্টে আপনি একদমই ভাল না, তাহলে আপনি ডিজাইনে কিভাবে সফল হবেন?
  • আপনি কি প্রথম দিকে ডিজাইন শিখতে নুন্যতম দৈনিক ৫-৬ ঘণ্টা সময় দিতে পারবে? কাজ শুরু করার পর ৭-৮ ঘণ্টাও যদি কাজ করতে হয়, পারবেন কিনা,
  • একজন নতুন হিসেবে আপনি কি থেকে শেখা শুরু করবেন?
সবাই জন্মগতভাবে সৃষ্টিশীল হয় না, নিজেকে বানিয়ে নেয়। কঠোর পরিশ্রম ও প্রবল ইচ্ছা এবং কাজের প্রতি ভাল লাগা আপনাকে শূন্য থেকে নিয়ে যাবে সফলতার দ্বারপ্রান্তে। আপনি আর্টে ভাল না, কোনকালেই ছিলেন না। কোন বড় বিষয় না, আপনার ইচ্ছা আছে তবে এখন শিখুন!
যত পারেন ভাল ভাল ডিজাইন ও টিউটোরিয়াল ঘাঁটুন। ইউটিউব ও বিভিন্ন ব্লগে গ্রাফিকের উপর করা ভাল ভাল টিউটোরিয়াল ও ডিজাইন থাকে, যা দেখলে আপনি প্রাথমিক ধারনা তো পাবেনই এবং আপনার জন্য ধারনা করা সহজ হবে ঠিক কোন পথে আপনি এগুবেন, কত সময় আপনার ব্যয় হবে ও আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন গ্রাফিক ডিজাইন ক্যারিয়ার হিসেবে নিলে আপনার শ্রম কেমন দিতে হবে। ফলে প্ল্যানে হাত দিয়ে আর হাত গুটিয়ে নিতে হবে না।
এছাড়াও সবসময় ভাল ডিজাইন দেখার অভ্যেস করে নিতে হবে, এক্ষেত্রে Graphicriverbehancecodegrapefreepik  ভাল প্লাটফর্ম। এখানে দেশি-বিদেশি অসংখ্য ভাল ডিজাইনারদের ডিজাইন দেখার সুযোগ রয়েছে। একজন সফল গ্রাফিক ডিজাইনার হতে আপনি যেভাবেই শুরু করুন না কেন কিছু বেসিক সব সময় একই রকম হয়। চলুন দেখে নেয়া যাক এমনি কিছু বিষয়–
লাইন, রঙ ও শেপের ব্যবহার জানুনঃ লাইন ,শেপ ও রঙ গ্রাফিক ডিজাইনের তিনটি বেসিক বিষয়।
লাইন হল ডিজাইনের বেসিক। ডিজাইনের একটি অংশ থেকে আরেক অংশের দুরত্ব, অ্যালাইনমেন্ট, ফোকাসের অংশকে চিহ্নিত করা, যেমনঃ ম্যাগাজিনের আর্টিকেলে প্যারাগুলো আলাদা করা, তার উপর নিচে ও পাশে জায়গা রাখা এবং হেডলাইনকে আলাদা করা।
রঙ হল ডিজাইনের প্রান। প্রতিটি রঙের কিছু নাম্বার থাকে। কিছু বেসিক রঙ আছে যাদের নাম্বার একজন ডিজাইনার হিসেবে জেনে রাখলে আপনার কাজটি আরও দ্রুত ও সহজ হবে। দুইটি সম্পূর্ণ ভিন্ন রঙের মিশ্রনে তৈরি করা সম্ভব আপনার ডিজাইনের ফোকাস রঙটি।
প্রতিটি অবজেক্ট একেকটি আদল বা শেপ, আপনি যখন কোন ডিজাইন দাড় করাবেন তখন আপনার ডিজাইনের প্রতিটি বস্তুকে একেকটি শেপের আওতায় নিয়ে আপনাকে ডিজাইনটি বানাতে হবে। প্রতিটি রঙের যেমন একটি বক্তব্য থাকে, ঠিক সেভাবেই প্রতিটি শেপের কিছু প্রকাশের ক্ষমতা থাকতে হবে। আপনাকে বুঝতে হবে যে কিভাবে ডিজাইন করলে তা একটি নির্দিষ্ট বক্তব্য তুলে ধরতে পারবে।
সামঞ্জস্যতাঃ একজন সফল ডিজাইনার তার ডিজাইনের বক্তব্য স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলার সাথে সাথে এও নিশ্চিত করবে যে ডিজাইনের প্রতিটি অবজেক্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা। ডিজাইন হবে সহজ, যেখানে শেপ বা রঙের অহেতুক আধিক্য থাকবে না।
পোর্টফলিও তৈরি করুনঃ ডিজাইন শেখার শুরুতে আস্তে আস্তে আপনার বেশকিছু ডিজাইন জমে যাবে। কিছু সময় বের করে নিজের একটি প্রফেশনাল পোর্টফলিও বানিয়ে ফেলুন, সাথে অনলাইন পোর্টফলিও বা নিজস্ব ওয়েবসাইট বানিয়ে ফেলুন। গ্রাফিক ডিজাইন রিলেটেড অনলাইন মার্কেটপ্লেসে যখন অ্যাকাউন্ট খুলবেন সেখানেও অবশ্যই পোর্টফলিও মেন্টেইন করুন। আপনি যত নিজের কাজের প্রচার করবেন তত আপনার ব্র্যান্ডিং হবে ও কাজের সুযোগ বাড়বে।
বিভিন্ন কন্টেস্টে অংশগ্রহণ করুনঃ বিভিন্ন সাইট আছে যেগুলোতে আপনারা বিভিন্ন ডিজাইনের কাজের উপর কন্টেস্ট বা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। কন্টেস্টে জিতে ডলার আয় করা যায় এসব সাইটে। কিন্তু মূল ব্যাপারটি প্রথমেই ডলার আয় নয়, আপনারা যারা নতুন এই পেশায় আসছেন বা কাজ শিখছেন তারা নিয়মিত এসব কন্টেস্টে অংশগ্রহণের ফলে আপনার যে উন্নয়ন হবে তা আপনাকে দ্রুত একজন দক্ষ ডিজাইনার করে তুলবে। এ ধরনের কিছু ওয়েবসাইট আছে designhilldesigncrowd।    
ছোট কাজ দিয়ে শুরু হোকঃ প্রথমেই খুব বড় প্রোজেক্ট হাতে নিবেন না। এতে শেখার সুযোগ কমে আসে, প্রেশার বেড়ে যায়। প্রাথমিক সময়ে শেখার দিকে মনোযোগ দিলে আপনি যতটা দ্রুত উন্নতি করবেন, পরে সময় নষ্ট করে সেই শেখাতে সময় দিলে ততটা লাভবান হবেন না।
নতুন ট্রেন্ড শিখুনঃ সবসময় নতুন যেকোনো ট্রেন্ড সম্পর্কে জানুন ও আপনার কাজে তার ছাপ ফেলুন। একজন সফল ডিজাইনার সে যে তার কাজে নতুনত্ব সময়ের তাগিদে তুলে ধরে। গত বছরের কিছু প্রচলিত ট্রেন্ড যেমন, মডার্ন রেট্রো, রেস্পন্সিভ লোগো, সিনেমাগ্রাফস, ইলুস্ট্রেশন বা হাতে আঁকা ছবির চল প্রভৃতি এবছরেও চলবে। এক্ষেত্রে নতুন করে শেখা চ্যালেঞ্জিং হলেও , চ্যালেঞ্জ নেয়ার মানসিকতা গড়ে তোলাও একজন সফল গ্রাফিক ডিজাইনারের একটি অন্যতম গুন।
একজন নতুন হিসেবে আপনার জানার পরিধি ও শেখার চেষ্টাকে ব্যাপক করুন। তা না হলে আপনি যত ভাল ট্রেনিং সেন্টারেই ভর্তি হন না কেন, যেখান থেকে শুরু করেছিলেন সেখানেই রয়ে যাবেন। সুতরাং যদি মন ঠিক করেই ফেলেন গ্রাফিক ডিজাইনার হবার তবে দ্রুত প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে দিন, কোন জায়গায় কোর্সে ভর্তি এখনি হতে হবে এমন কথা নেই। আগে জানুন, বুঝুন, এরপর প্রফেশনার একটি কোর্স করে ফেলুন আর অনেক অনেক প্র্যাকটিস করুন। সফলতার মূলমন্ত্র এটাই।
Share This