নাউ স্টাডি বাংলা ব্লগে আপনাকে স্বাগতম

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার হালচাল

আমি জানি আমার এই পোস্টটা দেখে অনেকেই চোখ কপালে তুলবেন। চিৎকার করে শরৎচন্দ্রের বিলাসী গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের খুড়োর মতো বলবেন, আমি অন্নপাপ করেছি। তবুও আমি আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার হালচাল নিয়ে বলার দুঃসাহস করেছি।



ব্লগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বনাম প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি নিয়ে অনেক পোস্ট পড়েছি। উচ্চবিত্তবানদের অর্থায়নে পরিচালিত প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি নিয়ে সবার ধারনা যেমন আছে, তা নিয়ে বিশেষ কিছু বলার ইচ্ছা নেই। তবে আমাদের জনগণের ঘামে ঝরানো অর্থে যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চলছে, তাদের পড়ালেখার মান নিয়ে আমার কিছু কথা আছে।



আমার এ পোস্টটি পড়ে অনেকেই প্রশ্ন আমি কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। অতীব আনন্দের(!) সঙ্গে জানাচ্ছি, আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অতি নগণ্য ছাত্র যার প্রতিটি শিক্ষাবর্ষ শুরু এবং শেষ হয় দুশ্চিন্তা দিয়ে। অর্থাৎ, এই শিক্ষাবর্ষের সিলেবাসে কি কি নতুন বিষয় আছে, পরীক্ষায় কেমন প্রশ্ন আসবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার, শিক্ষাবর্ষের শেষে পরীক্ষায় কেমন রেজাল্ট হবে, খাতাটা হারাবে না তো, রেজাল্ট আটকে থাকবে না তো ইত্যাদি ইত্যাদি।



অথচ আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সকল শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেন, তাদের অন্ততঃ এই সকল ভাবনা করতে হয় বলে আমার জানা নেই। হ্যাঁ, তাদেরও পড়াশোনা করতে হয় ভালো রেজাল্টের জন্য তবে আমাদের মতো এইসব ঝামেলা পোহাতে হয় না। ক্লাসে পড়ানোর মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরীক্ষায় প্রশ্ন করা হয়। অর্থাৎ ঠিকঠাক মতো ক্লাসে উপস্থিত থাকলে আর ক্লাস লেকচার ফলো করলেই অন্ততঃ মুটামুটি ভালো রেজাল্টই করা যায়।



জানি, অনেকেই এখন চেচিয়ে উঠবেন, গালিও দিতে পারেন। তাই কিছু উদাহরণ এখানে দিচ্ছি। খেয়াল করবেনঃ



১. আমার এক বন্ধুর রুমমেট যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে মাস্টার্সে পড়ছে, তার রেজাল্ট জিপিএ ৪ স্কেলে ৩.৯৮! অথচ সেই মেধাবী(!) সারাদিন গাঁজা আর রাজনীতি নিয়ে পড়ে থাকে। ( স্যরি, গাঁজা হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঐতিহ্য!!!)



২. সেই একই বন্ধুর আরেক হলের বাসিন্দা ইংরেজিতে অনার্সে জিপিএ ৪ স্কেলে ২.৯০ পেয়েছে যেখানে জাবিতে প্রথম শ্রেণী ধরা হয় জিপিএ ৩ কে। সেই অনন্য মেধাবী(!?)ও একই পথের পথিক! অর্থাৎ সেও সারাদিন গাঁজা আর রাজনীতি নিয়ে পড়ে থাকে। অথচ একজন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসা করবেন অর্থনীতি আর ইংরেজিতে সাধারন দ্বিতীয় শ্রেণী পেতে কেমন বেহাল হতে হয়। কিন্তু আবার তথাকথিত মানের প্রশ্নে সেইসব মেধাবীরা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন।



৩. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগে পড়ে আমার এক বন্ধু। বিভিন্ন কারনে সে ২০০৬ সালে এইচএসসি পাশ করে। অথচ, আজ সে ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। জিজ্ঞাসা করলে বলে, আরে আমাদের তো ৯ মাসে বছর! আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৩ সালে এইচএসসি পাশ করে কিছুদিন আগে অনার্স ফাইনাল দিলো!



৪. আমার এক সিনিয়র ভাই যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে মাস্টার্স করছে, তার ৩য় বর্ষ পর্যন্ত রেজাল্ট ৫৫ শতাংশ। সে বলে, ৪র্থ বর্ষে লিঙ্গুইস্টিক নিয়েছি যাতে ফার্স্ট ক্লাস পাই। অনেকদিন তার খোজ জানি না। অথচ, সারা বছর টিউশনি নিয়ে থাকতো আর রেফারেন্স বই পড়ার কথা কোনদিন তার মুখ থেকে শুনি নি।



এটা হলো খন্ড চিত্র। পুরো অবস্থা তো আরো ভয়াবহ! তাহলে আজ যে আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বলে উচ্চশিক্ষার মানবাহক বলে সার্টিফিকেট দিচ্ছি, তার এ অবস্থা দেখে আমরা এখন কি বলবো?



বি.দ্র. আমার এই পোস্ট সেইসব আসল মেধাবীদের জন্য নয় যারা তাদের মেধা দিয়ে দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, এইসব মেধাবীদের সংখ্যা যে অতি সামান্য।
university

Share This