নাউ স্টাডি বাংলা ব্লগে আপনাকে স্বাগতম

ইউ এন মিশনে বাংলাদেশের সেনাদের এত চাহিদা কেন ? মিশনে সেনারা কি করে ?

ইউএন এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এত চাহিদার কারণের পেছনে রয়েছে বেশ কিছু বিষয়। অনেকেরই একটা ধারণা আছে যে, আমাদের সেনাবাহিনী এমন কি হয়ে গেল যে সারা দুনিয়ায় এত চাহিদা। এই গরীব দেশের আর্মির অস্ত্র সাজসরঞ্জাম কিই বা আছে। দুনিয়ায় এত উন্নত দেশের আর্মি আর সাজ সরঞ্জাম থাকতে কেন বাংলাদেশ ইউএন এ সবোচ্চ সংখ্যক সেনা পাঠাচ্ছে।
আসলে বাংলাদেশ আর্মির মত এত সস্তায় এত ভাল পারফরম্যান্স অন্য কোন আর্মির কাছে ইউএন পায় না বলেই এদের এত চাহিদা। ন্যাটো সহ অন্যান্য ফোর্স চৌকস হলেও ভীষণ ব্যয়বহুল। একই সাথে আছে ডিসিপ্লিনের ব্যাপার, বিশেষত আফ্রিকার দেশগুলোতে অবাধ যৌনাচারে অভ্যস্ত সেনা সদস্যদের এইডস আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা। সেদিক থেকে আমাদের দেশের সেনারা অনেক নিরাপদ।

এখন আসি মিশন এলাকায় আমাদের সেনাদের কাজ প্রসঙ্গে। মিশন চলে যুদ্ধরত বা যুদ্ধবিদ্ধস্থ দেশ গুলোতে। এসকল বেশির ভাগ দেশেই সরকারের বিরোধী বিদ্রোহী গ্রুপ থাকে যারা সুযোগ পেলে ইউএন ট্রুপসের ওপরও হামলা চালায়। তাদের নিবৃত্ত করে যুদ্ধরত বা যুদ্ধবিদ্ধস্থ একটা দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কিন্তু খুব সহজ কাজ নয়। বিশেষত সেই দেশগুলো যখন আফ্রিকার (কিছু ক্ষেত্রে যুদ্ধরত, কিছু ক্ষেত্রে আধা সভ্য বা বর্বর) মানুষে পরিপূর্ণ। কিন্তু আমাদের সেনারা এই দুরহ কাজটি অত্যন্ত সফলভাবে করে যাচ্ছে এবং সারা বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার পাশাপাশি দেশকে প্রচুর রেমিট্যান্স দিচ্ছে বহিঃবিশ্বের মানুষ যে কয়টি কারণে বাংলাদেশের নাম জানে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইউএন মিশনে সর্বোচ্চ শান্তি রক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে।
প্রায়ই একটা কথা শোনা যায় যে আমাদের সেনা বাহিনী যুদ্ধ করারা উপযোগী কি না। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কিন্তু আমাদের কিন্তু সেনাদের প্রায়ই যুদ্ধাবস্থার মধ্যে কাজ করতে হয়। গত বছর আইভরি কোস্টে যখন যুদ্ধ দানা বেঁধেছিল তখন কিন্তু আমাদের দেশের সেনারাই শান্তি রক্ষায় বলিষ্ঠ ভুমিকা রেখে সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। এর আগে কঙ্গোতে শান্তিরক্ষা করতে গিয়ে বিপ্লবীদের সাথে যুদ্ধে বেশ কয়েকবার হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
মিশনে যুদ্ধ করতে যে সরঞ্জামাদি লাগে, সেগুলো জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী না হলে তার ভাড়া পাওয়া যায়না। জাতিসংঘ কতৃক এই নিয়ম করা হয়েছে যাতে করে ভালো সরঞ্জামাদির মাধ্যমে শান্তি রক্ষীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। অথচ আমাদের সেনারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুরনো এবং ঝুঁকি-পূর্ণ সরঞ্জামাদি দিয়ে মিশন করে আসে। নইলে সরকারের মোটা অঙ্কের টাকা লাগতো এ সব সরঞ্জাম কিনতে। তারা পুরনো সরঞ্জাম নিয়ে যায় এই মোটিভেশনে যে, আমাদের দেশ গরীব, নতুন সরঞ্জাম কেনার পয়সা নেই। কষ্টটা না হয় আমরাই করি।
যখন জাতিসংঘ থেকে যখন ইন্সপেকশনে আসে, তখন, সাধ্যের সব কিছু দিয়ে সেই পুরোনো জিনিষ গুলোকে “যুদ্ধোপযুক্ত” হিসেবে সার্টিফাই করায় তারা। কারণ, যুদ্ধোপযুক্ত না হলে রিম্বার্সমেন্টের টাকা পাওয়া যাবেনা। রিম্বার্সমেন্টের এই টাকা কিন্তু সেনারা নিজেরা পায়না। পায় সরকার। মিশনে সেনাদের থাকার জন্য পাকা ঘর পাওয়ার কথা। জাতিসংঘ সেই ঘর না দিতে পারলে বিনিময়ে টাকা দেয়। আমাদের সেনারা বেশির ভাগ সময়েই তাবুতে থাকে। তাবুতে থাকার কারণে প্রাপ্ত মোটা অংকের পুরো টাকাটাই কিন্তু সরকারী কোষাগারে জমা হয়।
আমরা গার্মেন্টস সহ অন্যান্য অনেক শিল্পের মাধ্যমে রাজস্ব আয়ের ব্যাপারে অবগত আছি। একই সাথে এটাও সত্য যে এদেশেই শ্রমিকদের প্রাপ্য সামান্য বেতনের জন্য রাজপথে নামতে হয়। তেমনি বিপুল পরিমান রাজস্ব প্রদানকারী সেনাবাহিনীর এই রূপটি কিন্তু আমাদের অগোচরেই থাকে। চোখের সামনে আমাদের শুধু ভাসে জলপাই রঙের নির্মমতা। দুর্ভাগা আমরা, কত ডেডিকেশন নিয়ে কাজ করলে আফ্রিকার একটা দেশের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাংলাকে অধিষ্ঠিত করে দেশকে এমন বিরল সম্মান এনে দেয়া যায় কখনো ভেবেছেন কি?

Share This