নাউ স্টাডি বাংলা ব্লগে আপনাকে স্বাগতম

বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে কি কি বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়?

ক। একাডেমিক – প্রত্যেককে বাধ্যতামুলকভাবে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করতে হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনাল এর অধীনে। এছাড়াও ট্যাক্টিক্স বা রণ কৌশল সহ অন্যান্য সামরিক বিষয়াবলীর ওপর বিশদ জ্ঞানার্জন করতে হয়। প্রশিক্ষণ দুই বছরের হলেও গ্র্যাজুয়েশন করতে তিন বছর লাগে। এর ধারাবাহিকতায় কমিশনের পর সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট অবস্থায় এই পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হয়। এখানে সাইন্স এবং আর্টস এর বিষয় গুলি ছাড়াও অতিরিক্ত কিছু বিষয় পড়ানো হয়। একজন সাইন্সের স্টুডেন্ট এর বিষয়গুলো সাধারণত এরকম –
বাংলা, ইংরেজী, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথমেটিক্স, (আর্টস এর ছাত্রদের জন্য ইকোনোমিক্স, পলিটিক্যাল সাইন্স ইত্যাদি )
সামরিক বিষয় যেমন- ম্যাপ রিডিং, ট্যাক্টিকস, মিলিটারি হিস্ট্রি, মিলিটারি সাইন্স, ন্যাশনাল এ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিস, মিলিটারি ল, অ্যাডমিনেস্ট্রেশন অ্যান্ড মোরাল, কমান্ড এন্ড লীডারশীপ ইত্যাদি।
সামরিক বিষয়গুলো সব ক্যাডেটকে বাধ্যতামূলকভাবে অধ্যয়ন করতে হয়
খ। শারীরিক – শারীরিক প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এক্ষেত্রে ধীরে ধীরে শারীরিক উৎকর্ষ এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয় যে দুই বছরের মধ্যে প্রত্যেকের ফিটনেস অসাধারণ হয়ে ওঠে।
গ। অস্ত্র প্রশিক্ষণ – পয়েন্ট টু টু বোর রাইফেল থেকে শুরু করে পিস্তল, রাইফেল, সাব মেশিনগান, লাইট মেশিনগান, রকেট লঞ্চার, গ্রেনেড, বিভিন্ন ধরণের এক্সপ্লোসিভ ইত্যাদি সহ প্রচলিত প্রায় সব ধরণের অস্ত্র চালনায় অত্যন্ত দক্ষ করে তোলা হয় প্রত্যেক সেনা অফিসারকে। সাধারণত প্রত্যেক সেনা অফিসারই একজন দক্ষ বা শার্প শুটার হিসেবে বিবেচিত।
ঘ। চারিত্রিক প্রশিক্ষণ – “A gentleman or gentlewoman should lead a life of HONESTY and INTEGRITY. He or she shall not LIE, CHEAT or STEAL”। এইটা মিলিটারি একাডেমীর HONOUR CODE নামে পরিচিত যা প্রত্যেক ক্যাডেটকে শুধু মানতেই হয় না, আত্মস্থ করতে হয়। চারিত্রিক বিষয়ে বিএমএ তে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। এমন ঘটনাও শুনেছি যারা প্রায় দুই বছর প্রশিক্ষণ নেয়ার পর অফিসার হওয়ার ঠিক আগে আগে ছোটখাট অনেক কারণে একাডেমী থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও প্রত্যেককে কমান্ড এবং লীডারশীপের ওপর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এক একজন দক্ষ কমান্ডার হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এসবের বাইরেও ধর্মীয় বিষয়, নিয়মিত ড্রিল, হর্স রাইডিং, ভেহিক্যাল ড্রাইভিং, র‍্যাপেলিং বা হেলিকপ্টার থেকে র‍্যাপেলিং, প্যারা জাম্পিং, স্কুবা ডাইভিং ইত্যাদি নানা রকম প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ক্যাডেটদেরকে।
কমিউনিকেশন স্কিল বৃদ্ধি করতে পাবলিক স্পিকিং এর পর্যাপ্ত অনুশীলন সহ ল্যাংগুয়েজ ল্যাবেরটরিতে সঠিক ভাবে বাংলা ও ইংরেজি উচ্চারণের প্রশিক্ষণ (বি এম এ ছাড়া এরকম ল্যাংগুয়েজ ল্যাবেরটরি সম্ভবত শুধুমাত্র ব্রিটিশ কাউন্সিলেই আছে) দেয়া হয় সব ক্যাডেটকে। এ কারণে প্রায় সব সেনা অফিসারেরই সাধারণত বাংলা ও ইংরেজীতে কমিউনিকেশন স্কিল বেশ ভাল হয়ে থাকে।
তবে সততা বা চরিত্রের উপর সরবাধিক গুরুত্ব থাকে সবসময়। কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে যে কারো সততার কোন অভাব আছে বা চারিত্রিক কোন সমস্যা আছে তাহলে তাকে যে কোন পর্যায়েই একাডেমী থেকে বহিস্কার করা হয়। এছাড়াও প্রশিক্ষণের সময় ইনজুরড হয়েও অনেককে বাড়ি চলে যেতে হয়। অনেকে আবার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে স্বেচ্ছায় বিএমএ থেকে চলে যায়। প্রতি ব্যাচে বা কোর্সে গড়ে ১০-১৫ জন এ ধরণের বহিস্কারের শিকার হয়।
Share This