নাউ স্টাডি বাংলা ব্লগে আপনাকে স্বাগতম

ভালোবাসার গল্প,

হ্যালোসুমন কি করছিস?
 - এইতো আছি একরকম তোর কি খবর?
 - ভালো পরশুতো ঈদ আমি বাসায় ফিরছি খুব আড্ডা হবে
 - হা হা হা ওকেবস তাহলে পরশু দেখা হচ্ছে
 - তোকে আবার দাওয়াত দিতে হবে নাকি
 - না না কি যে বলিস ওকে ব্রাদার মঙ্গলবার কনফার্ম
 - পাক্কা ভাবিকে নিয়ে আসবি কিন্তু
 - শিওর

ফোনটা রেখেই মনটা আজ কেমন জানি বিষণ্ণ হয়ে গেলো ইমরানের কথাগুলিএখনও কানে বাজছে প্রতিবার ঈদ এর দিনটা এলেই আমার এমন হয় ঈদএর নিমন্ত্রণ এর কথা বললেই আমার মনে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি হয় একটাসময় কাটিয়ে উঠার যন্ত্রণায়

হিন্দু বাড়ির সন্তান হিসেবে একেবারে শৈশবেই আমার মনে একটা বীজ ঢুকিয়েদেওয়া হয়েছিলআমাদের একটা ধর্ম আছেঠাকুর আছেদেবতা আছেযারাআমাদের সব কর্মের বিধান করেন!! বাড়িতে সকাল সন্ধ্যা নাটমন্দিরে বাড়ির বউয়েরামানে আমার কাকিমা-জ্যাঠিমারা পুজো দিতেন যৌথ পরিবারে বড়হওয়ার দরুন কিছু সংস্কার এমনিতেই আমার মনের ভেতর জন্ম নিয়েছিল কাজের দরুন দাদু বেশীরভাগ সময় বাড়ির বাইরেই থাকতেন বাবা কাকারাওঠিক একই আর তাই পরিবারের হর্তা কর্তা – সবই ছিলেন ঠাকুমা বাড়ির বউদের ক্ষেত্রে একেবারে দজ্জাল শাশুড়ি বলতে যা বোঝায় তাই ছিলেন আমাদেরঠাম্মা তবে হাত চালানোর কোন ব্যাপার ছিলনাবউদের খুঁত ধরা আর সারাক্ষণ গলা উঁচিয়ে চোপাবাজি করা ছিল উনার অন্যতম প্রধান কর্ম মা আমাকেদুষ্টুমির জন্য বেতালেপরক্ষণেই যখন কোনো কাজের জন্য বকুনি খেতেন তখন খুব মজা পেতাম

ঠাকুমার চোখ এড়িয়ে বাড়িতে মাছি প্রবেশ করতে পারত নাপান থেকে চুন খসলেই বিপদ আমরা যারা কাকাতো এবং জ্যাঠতুতো ভাইয়েরা ছিলাম সবসময়ই উনার ভয়ে গুটিসুটি মেরে থাকতাম বাড়ির পরিবেশ তখন এমনি ছিল যে অন্য ধর্ম থাক দূরের কথা হিন্দুদের মধ্যেই অন্য জাতের লোকজনের সঙ্গেআমাদের উঠাবসা ছিলোনা তথন আমাদের পারিবারিক অবস্থাও যথেষ্ট ভালো ছিল এত শেকল যুক্ত পরিবেশের মধ্যে আমায় স্বস্তির বাতাস এনে দিত স্কুলস্কুলে গেলে আর বাড়িতে আসতে ইচ্ছে করত না কারণ বাড়িতে ঢুকে গেলেই সেই শৃঙ্খল আমাদের বাড়ির পাশেই বিকেলবেলা মাঠে সব ছেলেরা ক্রিকেটখেলছে অথচ আমাকে জোর করে বিছানায় শুইয়ে রাখা হয়েছে খুব কাঁদতাম বালিস বেয়ে টুপটাপ শব্দে জল পড়ত ছুটে যেতে ইচ্ছে করতো মাঠে পারতামনা আর ঘুমও আসতো না

এই বন্ধ পরিবেশে বড় হওয়ার দরুন বোধ হয় কিছু জেদ চেপে বসেছিলো আমার মনে সেই দিনের কথা আমি স্ট্যান্ডার্ড - এইট এর ছাত্র খানিকটা বড়হয়েছি শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তন জানান দিচ্ছে বড় হচ্ছি দ্রুত স্কুলে ব্রেক টাইমে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছি হঠাত বাপ্পি এবং নৌসাদ এসে হাজির

বাপ্পি বলল – কাল কিন্তু তোদের সব্বাইকে আমাদের বাসায় যেতে হবে ঈদের নিমন্ত্রণ

নৌসাদ বলল – আমার মা অনেক ভালো পিঠে বানায়তোদের খুব ভালো লাগবেতোরা সবাই আসবি কিন্তু

বাপ্পির সঙ্গে আমার বিশেষ সখ্যতা ছিল বাপ্পি আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললগত বছরও কিন্তু তুই গেলিনাএইবার কোনো বাহানা করলে চলবেনাতোকে যেতেই হবে

আমি তাকে বললাম – যাবো এইবার শিওর

মনে একটা ভয় ছিলকিশোর মনে সঙ্কোচ ছিলদ্বিধা ছিলো কিন্তু তাতে কিবড় হয়ে গেছি আমরা বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে ভিতু অসিত যখন বললআমিওনিশ্চয়ই যাবো তখন আর কোনো দ্বিধা না রেখে ওদের জানিয়ে দিলাম আমরা যাচ্ছি

পরেরদিন ঈদ স্কুল ছুটি তখন একটু হাল্কা পাতলা বাড়ির বাইরে যাওয়ার অনুমতি মিলেছে ক্রিকেট খেলতে পারছি বিকেলে সব বন্ধুরা জড়ো হলাম আজক্রিকেট খেলা বন্ধ কিন্তু মজার বিষয় নিরেশবিমলঅজয়সুকান্তসুমিতরাকেশরা সবাই এলেও অসিত আসেনি কালকেতো ভালোই গলাবাজি করেগেছিলপরে খবর পেয়েছিলাম ভীতু অসিত বাড়িতে বলেই দিয়েছিল সে কোথায় যেতে চায়এবং যা হবার তাই হয়েছে – কেলানি খেয়েছে যাই হোক সবাইমিলে রওনা দিলাম প্রথমেই গেলাম নৌসাদ এর বাড়িতে ওর মা আমাদের খুব আদর করে নিয়ে গিয়ে তাদের বসার ঘরে বসতে দিলো তারপর ভুঁড়ি ভোজশেমাই দিয়ে তৈরি সেই বিখ্যাত পায়েস হাপুস করলাম তিন বাটি বন্ধুদেরও একই কন্ডিশন তারপর এল পিঠার পালা পৌষ সংক্রান্তিতে আমাদের বাড়িতে যেপিঠা বানানো হয় সেই পিঠার সাথে এই পিঠার কোনো মিল খোঁজে পেলাম না নাম জানা হলো না তবে একটার মধ্যে কামড় বসিয়েই... তারপর একথালাকাবার মোটামোটি পেট হাতাতে হাতাতে নৌসাদদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম আমরা আন্টি মানে নৌসাদের মা আমাদের রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেলেন,আদর করে বললেন – আবার এসো তোমরা বললামআসবো নিশ্চয়ই অন্য বন্ধুরা পরে কথা রেখেছিলো কিনা আমি জানার চেষ্টা করিনিতবে আমি কথারেখেছিলাম





Share This