নাউ স্টাডি বাংলা ব্লগে আপনাকে স্বাগতম

"ট্রেন্স এর আজব কাহিনী !!"

"ট্রেন্স এর আজব কাহিনী !!"
.
অফিসার্স জুনিয়র টেকটিকস কোর্স করছিলাম সিলেটের স্কুল অফ ইনফেন্ট্রি এন্ড টেকটিকস এ, সংক্ষেপে SI&T।
কোর্সে প্রচুর পড়ালেখা, সাথে বিভিন্ন রকম ফিল্ড ট্রেনিং।
অনেকদিন আগের কথা, তবুও দিব্যি মনে আছে, মনে হচ্ছে সেদিনের কথা।
কত না আনন্দ আর কষ্টের স্মৃতি কথা...! সেগুলো না লিখে যাওয়া যায় না।
ঘটনা তেমন কিছুই না হয়তো, তবে সামরিক চাকুরী শেষ করে অবসর জীবনের স্মৃতিচারণ মনকে খুব প্রফুল্ল করে দেয়।
.
.
ফিল্ড ট্রেনিং এর এক পর্যায়ে আমরা সিলেট থেকে জাফলং এর দিকে গেলাম ডিফেন্স নিতে। ডিফেন্স এর একটি অংশ মানেই ট্রেন্স খোড়াখুড়ি আর এটি প্রচুর কষ্টকর একটি ব্যাপার।
অন্য অনেক ব্যাপার স্যাপার আছে, তবে ট্রেন্স নিয়ে মজার কিনা জানি না, তবে একটি ঘটনা খুব বেশি করে মনে পরে!!
ফজরের নামাজের পর থেকে চক্কর শুরু হয়েছে, কোন বিশ্রাম নেই ; রোদ আর বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সারাদিন শুধু হাঁটা আর মাঝে মধ্যে কিছুটা বিশ্রাম। যাওয়ার সময় পাশ থেকে অন্য লোকদের অনেক মন্তব্য শুনতে পাচ্ছিলাম...
এত কষ্ট মানুষে করায়, কি কষ্ট দিচ্ছে এদের...!
আহারে কি কষ্টরে আর্মির চাকরী...! ইত্যাদি ইত্যাদি।
সারাদিন হাঁটার পর সন্ধ্যাকাল নাগাদ আমরা নারিকেল বাগান নামক এক গ্রামে পৌঁছালাম, এখানেই আমাদের ডিফেন্স নিতে হবে।
মন্দ না, জায়গাটা আমার পছন্দ হয়ে গেল।
কমান্ডার এসে কোথায় আমাদের ট্রেন্স খুড়তে হবে, সে জায়গাটা দেখিয়ে দিয়ে গেল কিছুটা দূর থেকে!!
সারাদিন হাঁটার পর প্রচুর ঘাম ঝরেছে, শরীরে সাথে বৃষ্টি আর কাদায় একবারে নাস্তানাবুদ।
ক্লান্তিতে গাছের নিচেই ঘুমিয়ে পড়লাম কিছুক্ষণের জন্য।
কিছু খাওয়া দরকার, সাথে সিগারেট ছাড়া কিছুই নেই। কখন যে রাতের খাবার খাব, তার নিশ্চয়তা নেই!!
রাত ৮টা নাগাদ একটি রাইফেল ট্রেন্স ভাগে পড়ল আমার আর এক সিনিয়রের। বেলচা দিয়ে খুড়তে শুরু করলাম, নরম মাটি আর হাল্কা বৃষ্টি হওয়াতে খুড়তে তেমন সমস্যা হচ্ছিল না। সমস্যা একটাই ছিল আর সেটা হলো - পেটে প্রচুর না, প্রচন্ড ক্ষুধা!!
অল্প সময়েই অর্ধেকের বেশি খুঁড়ে ফেললাম....এই সময় খাবার এসেছে শুনলাম।
কিসের হাত ধোয়া ধুয়ি, খেতে শুরু করলাম গোগ্রাসে.....
কিসের যেন পচা গন্ধ পেলাম চারিদিকে, ট্রেন্সে বসে খাচ্ছি, কিছুই অসুবিধা হাওয়ার কথা না!!
তবুও খেয়ে চললাম, ক্ষুধা বলে কথা!
না, গন্ধে টেকা দায় হয়ে গেল... গন্ধ আসে কোথা থেকে!!!
হঠাৎ দেখলাম কে একজন হ্যারিকেন নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।
: "বাব জানেরা কি করেন এখানে?"
বললাম- "চাচা ট্রেনিং করছি।"
: "বাবারা দেইখেন, আমার মেয়ের কবর আছে এখানে, মাস খানেক আগে মারা গেছে!!! "
চাচায় কয় কি!!!!!!
চারিদিক তাকিয়ে দেখলাম... না কোথাও কবর নেই!!! টর্চ মেরে পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম আমি কবরের উপর বসে আছি.... সত্যিই বসে আছি...!
ঐ যে সাদা কাফনের কাপড় দেখা যাচ্ছে!!!
আর গন্ধ? সব আমার ট্রেন্স থেকে আসছে.....
আমি হাত ধুইনি... হাতটি আগে থেকেই কেন যেন পিছলা ছিল... সব মনে পরে গেল...
এভাবেই আমি ট্রেন্স না, কবর খুঁড়েছি...!!

written by আতিক রহমান


Share This