নাউ স্টাডি বাংলা ব্লগে আপনাকে স্বাগতম

আইএসএসবি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি

সামরিক বাহিনীর অফিসার হিসেবে একজন প্রার্থীর কর্মকৌশল এবং ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডকে বিবেচনায় রেখে আইএসএসবি নির্বাচনি প্রক্রিয়াটি সাজানো হয়েছে। মূলত ত্রিমাত্রিক ব্যক্তিত্ব অভীক্ষা’র (Personality Test) মাধ্যমে আইএসএসবি তার নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পাদন করে থাকে।
আইএসএসবি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি
আইএসএসবি পরীক্ষা দেশের অন্যান্য ভর্তি পরীক্ষা হতে কিছুটা ভিন্নতর। এখানকার সকল পরীক্ষা নির্ধারন করা হয়েছে প্রার্থীদের বয়স এবং শিক্ষাগত যোগ্যতাকে বিবেচনায় রেখে।  প্রিলিমিনারী (মৌখিক ও মেডিক্যাল) এবং লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদেরকে আইএসএসবি’তে পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। আইএসএসবি’তে অংশগ্রহনকারী প্রার্থীদের পরীক্ষা দুটি ধাপে পরিচালনা করা হয়ে থাকে। কেবলমাত্র প্রথম ধাপ পেরুতে পারলেই  প্রার্থীরা দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সুযোগ পায়। প্রথমদিন সকালে (প্রথম ধাপ) ইন্টেলিজেন্স এবং পিপিডিটি পরীক্ষা হয়। প্রথম ধাপে  অকৃতকার্য প্রার্থীদের বিদায় নিতে হয়। অবশিষ্ট প্রার্থীরা চারদিনের সম্পূর্ণ পরীক্ষায় (দ্বিতীয় ধাপ) অংশগ্রহন করতে পারে।
সামরিক বাহিনীর অফিসার হিসেবে একজন প্রার্থীর কর্মকৌশল এবং ভবিষ্যত কর্মকান্ডকে বিবেচনায় রেখে আইএসএসবি নির্বাচনী প্রক্রিয়াটি সাজানো হয়েছে। মূলতঃ ত্রিমাত্রিক ব্যক্তিত্ব অভীক্ষা’র (Personality Test) মাধ্যমে আইএসএসবি তার নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পাদন করে থাকে।
শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত একজন প্রার্থীর ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে প্রাকৃতিকভাবেই। তার পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সতীর্থদের সহচার্য এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় গড়ে ওঠে  স্বকীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য (Personality Traits)। সেই অর্থে একজন প্রার্থীর মানসিক প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় অনেক আগে থেকেই। পরবর্তীতে জীবনের লক্ষ্য অনুযায়ী প্রয়োজন পড়ে সার্বিক প্রস্তুতির।  
সর্বপ্রথমে প্রার্থী হিসেবে প্রয়োজন নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতা। আপনার কার্যকরী মৌখিক এবং লিখিত প্রকাশ ক্ষমতাই পারে আইএসএসবি পরীক্ষায়  নিজের যোগ্যতাকে তুলে ধরতে। অতএব, এ বিষয়ে পারদর্শীতা অর্জনে আপনাকে বিশেষ যত্নবান হতে হবে।
সমসাময়িক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ধারণার জন্য দৈনিক সংবাদ পত্র পড়া এবং  টেলিভিশনের সংবাদ ও তথ্যমূলক অনুষ্ঠান দেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যে কোন সাধারন বিষয়ে কিছু বলা বা লেখার (বাংলা এবং ইংরেজী) অনুশীলনের কোন বিকল্প নেই। পাশাপশি, পেশাগত প্রয়োজনে আপনার শারীরিক যোগ্যতা আইএসএসবি’তে একান্তভাবে কাম্য। এজন্য নিয়মিত শরীরচর্চা ও খেলাধূলায় অংশগ্রহনের মাধ্যমে আপনাকে প্রয়োজনীয় শারীরিক যোগ্যতা অর্জনে সচেষ্ঠ থাকতে হবে।
প্রতিটি ব্যক্তিই অন্যের থেকে আলাদা (Individual Differences)। আপনার ব্যক্তিত্ব একান্তই আপনার। অন্যকে অনুকরন বা অন্যের পরামর্শে নিজেকে অযাচিতভাবে পরিবর্তন করাটা নেহায়েৎ বোকামি। কেননা, এতে করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আপনার অর্জিত ব্যক্তিত্বে নানাবিধ অসংগতি পরিলক্ষিত হয়। সুতরাং , আপনি ‘যেমন’ – নিজেকে ঠিক ‘তেমন’টিই প্রকাশ করুন। মনে রাখবেন, আইএসএসবি’তে আপনার মানবীয় গুনাবলী এবং সাবলীল আচরণ যথেষ্ঠ গুরুত্ব  রাখে।  উচ্চ মাত্রায় কৃতি অর্জনের চাহিদায় সৃষ্ট অত্যাধিক পরীক্ষাভীতি (Test Anxiety) একজন প্রার্থীর প্রত্যাশিত কার্যকলাপ শুধুমাত্র বিঘ্নিতই করে।
একজন প্রার্থী সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং এএমসি ক্যাডেট (আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজের জন্য) হিসেবে আবেদন করতে পারবেন। তবে একটি সেশনে (বছরে দুটি সেশন) একজন প্রার্থী যেকোন একটি ক্ষেত্রে আইএসএসবি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারবেন। সেজন্য আপনাকে আপনার পরীক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য অধিকতর পছন্দনীয় বাহিনীটিকে বেছে নিতে হবে ।
আইএসএসবি হতে প্রেরিত কল-আপ লেটার এর মাধ্যমে প্রার্থীকে আইএসএসবি’তে পরীক্ষার তারিখ এবং বিস্তারিত নির্দেশাবলী জানানো হয়ে থাকে। একইসাথে আইএসএসবি ওয়েবসাইটেও (www.issb-bd.org) এ সময়সূচী আপলোড করে দেয়া হয়। সুতরাং, ডাকযোগে কল-আপ লেটার পৌঁছাতে দেরী হলেও ওয়েবসাইটে সেই তারিখ আগাম জেনে নেওয়া যায়। আর তাই, কল-আপ লেটার না পেলেও ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী প্রার্থীরা নির্দিষ্ট দিনে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারে। সেক্ষত্রে প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী ওয়েবসাইট থেকেই জেনে নিতে হবে। পরীক্ষার তারিখে প্রার্থীদের সময় অনুযায়ী (সকাল ০৭:৩০ ঘটিকার মধ্যে) আইএসএসবি গেটে উপস্থিত হতে হবে। আর তাই দূরত্ব এবং যানজট বিবেচনা করে আপনার কিছুটা সময় হাতে রেখেই রওনা হওয়া উচিৎ।
পরিশেষে, আইএসএসবি’তে  স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিটি পরীক্ষায় অংশগ্রহনের মাধ্যমে একজন যোগ্য প্রার্থী সহজেই নির্বাচিত হয়ে থাকেন। আইএসএসবি পরীক্ষায় ‘অকৃতকার্যতা’ একজন  প্রার্থীর সার্বিক যোগ্যতার মাপকাঠি নয়। একটি কথা সকলেরই উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে – প্রতিটি মানুষ নির্দিষ্ট কাজের জন্য উপযুক্ত। আর তাই, সামরিক কর্মকর্তার জন্য উপযুক্ত না হলেও সেই একই ব্যক্তি ভবিষ্যতে হতে পারেন বিশিষ্ট ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার অথবা বিখ্যাত একজন সাহিত্যিক। প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে দেশ সেবার অপার সুযোগ।।
Share This