নাউ স্টাডি বাংলা ব্লগে আপনাকে স্বাগতম

জেসিও প্রেসিডেন্ট এরশাদকে বললেন, স্যার আমাদের নাকি একটা ভাই হয়েছে?

অবশেষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জামাইছড়ি থুম ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় এবং তারিখ এলো। আমি ইতিমধ্যে জামাইছড়ি থুম ক্যাম্প পরিদর্শন করেছি। প্রেসিডেন্ট জেনারেল হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ যিনি তখন সেনাবাহিনী প্রধানও তাঁর জামাইছড়ি থুম ক্যাম্পে আগমনের সময় এবং তারিখ পাবার পরে জামাইছড়ি থুম ক্যাম্পে এসে প্রেসিডেন্টের ক্যাম্প ভিজিটের যাবতীয় ব্যবস্থাদি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে টাইআপ এবং নিশ্চিত করলাম।
সব ব্যবস্থা এমনভাবে নিজে থেকে নিশ্চিত করলাম যাতে প্রেসিডেন্টের পরিদর্শনের সময় যেন কোনো প্রশ্ন উত্থাপন না হয়। এমনকি যা প্রসিডেন্টের ভিজিটের যময় উত্থাপিত হতে পারে তাও নিশ্চিত করলাম। প্রেসিডেন্টের জামাইছড়ি থুম ক্যাম্প পরিদর্শনের সম্ভাব্য সূচী ছিলো এইরূপ :
১. জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ( জিওসি ) জেনারেল মান্নাফ, ব্রিগেড কমান্ডার কর্ণেল ইমতিয়াজ এবং আমি হেলিপ্যাডে প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের রিসিভ করবো।
২. আমি ক্যাম্পের অভ্যন্তরে প্রেসিডেন্টকে ম্যাপে ব্রিফিং করবো।
৩. ব্রিফিং শেষে পরিদর্শনের সময় টুআইসি মেজর কাদের ব্যাঙ্কারের সামনে প্রসিডেন্টকে রিসিভ করবেন এবং পরিদর্শন কন্ডাক্ট করবেন ।
৪. প্রেসিডেন্টের পরিদর্শনের শেষে টি ব্রেক হবে এবং চা পানের পরে আমি আমার অফিসার, জেসিও ( জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার ) এবং এনসিও ( নন কমিশন্ড অফিসার ) দের সাথে প্রেসিডেন্টকে পরিচয় করিয়ে দেব।
৫. বিদায়ের আগে রাষ্ট্রপতি পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করবেন।
প্রেসিডেন্ট ক্যাম্পে আসার পুর্বে আমি ডিউটি বাদে সবাইকে ফল ইন করে খুব পরিষ্কারভাবে বললাম পরিদর্শনের সময় কেউ প্রেসিডেন্টকে কোনো প্রশ্ন করবে না। যদি প্রেসিডেন্ট কোনো কিছু জিজ্ঞেস করে তবে একটাই উত্তর হবে “ভালো আছি স্যার”। কয়েকবার এটা কনফার্ম করলাম যে রাষ্ট্রপতিকে কেউ কোনো প্রশ্ন করবে না। আমি কেন প্রেসিডেন্টকে প্রশ্ন করতে বা নিজের সুবিধা, অসুবিধার কথা প্রেসিডেন্টকে বলতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছিলাম, কারণ এটাই নিয়ম। কি বলতে কি বলে বসবে তখন অহেতুক টানাটানি শুরু হবে। তদুপরি সৈনিকদের সমস্যা রাষ্ট্রপ্রধানের সমাধান করার কথা নয়। তিনি চাইলেও তা কমান্ড চ্যানেলেই তার সমাধান করতে হবে অতএব এনিয়ে প্রেসিডেন্টকে বিব্রত করা কোনো কাজের কথা নয়। তাই যা হয় আমিও তাই অনুসরণ করলাম।
ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার থেকে মেসেজ আসলো ব্রিগেড কমান্ডার এবং জিওসি হেলিকপ্টারে আসছেন জামাইছড়ি থুম ক্যাম্পে। আমি এবং টুআইসি মেজর কাদের জিওসি এবং ব্রিগেড কমান্ডারকে হেলিপ্যাডে রিসিভ করলাম। ওনারা ক্যাম্পে আসলে আমি প্রেসিডেন্টের ভিজিটের একটা রানডাউন তাঁদেরকে দিলাম। দেখলাম উভয়ে খুব সন্তুষ্ট হলেন সব সুন্দর এরেঞ্জমেন্ট দেখে। ব্রিগেড কমান্ডার কর্ণেল ইমতিয়াজ আমার কানে কানে বললেন, ওটা সবাইকে বলেছো তো। আমি বললাম, স্যার বলেছি এবং কয়েকবার কনফার্ম করেছি- কেউ প্রেসিডেন্টকে কোনো প্রশ্ন করবে না । সব কিছুতে শুধু বলবে, ভালো আছি স্যার । দেখলাম তিনি নিশ্চিন্ত হলেন।
আমি, জিওসি এবং ব্রিগেড কমান্ডার প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর সফর সঙ্গীদের হেলিপ্যাডে যথারীতি রিসিভ করলাম। আমি ত্রিশ মিনিটের একটি ব্রিফিং প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর সফর সঙ্গীদের দিলাম। দেখলাম প্রেসিডেন্ট ডিফেন্স সেক্রেটারীকে সাথে এনেছেন। তিনি কিছু প্রশ্ন করলেন আমাকে। সাধারণত খুব জরুরী এবং কন্ট্রোভার্সিয়াল বিষয় না হলে প্রেসিডেন্ট এই সব পরিদর্শনে কোনো প্রশ্ন করেন না। কিংবা যদি হঠাৎ এমন কিছুর উদ্ভব হয় যার আগাম ধারণা ছিলো না তাহলে প্রেসিডেন্ট তাঁর মন্তব্য সবার জন্য করেন।জামাইছড়ি থুম ক্যাম্পে ঐ ধরনের তেমন কিছু না ঘটার কারণে এনিয়ে আমি প্রেসিডেন্টর কাছ থেকে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হলামনা। প্রেসিডেন্টের ক্যাম্প পরিদর্শন শুরু হলো
টুআইসি মেজর কাদের বাঙ্কারের সামনে প্রেসিডেন্টকে রিসিভ করলেন। আমি এবং জিওসি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। বাঙ্কারের ভিতরে একজন জেসিও প্রেসিডেন্টের সাথে তার দায়িত্ব এলাোর ফায়ার সমন্বয়ের বিষয়ে ব্রিফ করলেন । প্রেসিডেন্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাঙ্কার থেকে বের হয়ে ডিফেন্স সেক্রেটারিকে বললেন ” See how our boys are working under difficult situations”. শুনে মনটা খুব ভালো হলো।
পরিদর্শনের বোঝা কাছুটা হালকা হলো। এর পরে যে কি চমক আমাদের সবার জন্য অপেক্ষা করছিলো তা আমরা কেউ ঘূর্ণাক্ষরেও আগাম আন্দাজ করতে পারি নাই। প্রেসিডেন্ট এরশাদ দ্বিতীয় বাঙ্কারে ঢুকলেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত জেসিও তার কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তাঁকে ব্রিফ দিলেন। প্রেসিডেন্ট বের হয়ে আসবেন এমন সময় ঐ জেসিও প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে বললেন- “স্যার আমরা একটা সুখবর পেয়েছি”। প্রেসিডেন্ট জিজ্ঞেস করলেন- কি সুখবর? জেসিও বললেন, স্যার আমাদের নাকি একটা ভাই হয়েছে? প্রেসিডেন্ট এরশাদ বললেন, হ্যাঁ তোমরা ঠিকই শুনেছো। আল্লাহ আমাকে একটা ছেলে সন্তান দিয়েছেন। তো তোমরা কি চাও। গরু স্যার- জেসিও বললেন । প্রেসিডেন্ট এরশাদ জিওসি’র দিকে ফিরে বললেন- মান্নাফ এদের একটা গরু দিয়ে দিও ।
আমাদের সবার মুখ এবং চোখ লাল হয়ে গেছে। এটা কি? এতো ব্রিফ করার পরেও এমনতো ঘটার কথা না। আমি দাঁত চেপে থাকলাম। ব্রিগেড কমান্ডার এবং জিওসি প্রেসিডেন্টের সাথে বিদায় নিলেন। আমি অফিসার, জেসিও এবং এনসিওদের এক লাইনে দাঁড় করিয়ে সবাইকে প্রেসিডেন্টের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম।
প্রেসিডেন্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্যাম্প পরিদর্শনে খুব সন্তুষ্ট মৌখিকভাবে আমাকে অবহিত করলেন। জিওসি এবং ব্রিগেড কমান্ডার উভয়ে প্রেসিডেন্টের পরিদর্শনে আনন্দিত আমাকে জানালেন। সব মিলিয়ে প্রেসিডেন্টের ভিজিট খুব ভালো হয়েছে জেনে সবাই উৎফুল্ল হলাম।
চলবে…

মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান । প্রাক্তন মহাপরিচালক বিডিআর ।

Share This